দোয়েল বা দইনাচিনি
ইংরেজি নামঃ Magpie Robin/Oriental Magpie Robin/Dhyal Thrush
বৈজ্ঞানিক নামঃ Copsychus saularis
দোয়েল পরিচিতিঃ দোয়েল
বাংলাদেশের জাতীয় পাখি।এই পাখি আমাদের স্থানীয় প্রজাতি।এই দেশের গল্প,কবিতা,গানে
সবচেয়ে বেশী যে পাখির নাম এসেছে সেই পাখিটিই হচ্ছে দোয়েল।শুধুমাত্র নতুন বিস্তৃত
চড় ও দ্বীপ ছাড়া মানুষের বসতি রয়েছে এমন সকল স্থানেই দোয়েল পাখি দেখা যায়।অবাক
করার মত সত্য হল বাংলাদেশের সুন্দরবনে এদের দেখা মেলেনা।
বাংলাদেশের মানুষের জীবনে
ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে দোয়েলে পাখির নাম। বাংলাদেশের যে কয়টি পাখি ভোরে কোরাস
করে গান করে তার মধ্যে দোয়েল অন্যতম।ভোরের আযান থেকে সাঁঝের সূর্য-ডোবার সাথে
দোয়েলের সুর ও শিস জড়িত।কথিত রয়েছে এই দেশের মানুষের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে
যুদ্ধ করে বেঁচেথাকার সাথে সাথে দোয়েলও তাদের সাথি হিসেবে পাশে থাকে।
দোয়েল পাখি আকৃতিতে বাংলাদেশের
পরিচিত পাখি খঞ্জনের কাছাকাছি শ্যামার চেয়ে ছোট তবে এদেরও লেজ লম্বা,বুক থেকে
থুতনি,ঠোঁট থেকে সম্পূর্ণ উপরের দিক ও লেজের উপরের অংশ কালো।পা ও পায়ের পাতা কালো।মেয়ে
পাখিটি কালো বর্ণের পরিবর্তে ধুসর বর্ণের হয়ে থাকে।কালো ডানার উপর বড় সাদা ফালী,কালো
লেজের বাইরের পালক সাদা,নিচের দিকে অর্থাৎ পেট থেকে পুড়া নিচের দিকটাই সাদা।যুবরা
ফুটকিসহ বাদামি ও ধুসর সাদা।
দোয়েলকে আমাদের চারপাশে
একাকী জোড়ায় জোড়ায় দেখতে পাই।অনেক সময়ে এরা নিজের মনে এডাল থেকে ওডালে শিস দিয়ে
ণেচে নেচে বেড়ায় মাঝে মাঝে লেজ উপরে-ণিচে হেলিয়ে ডাণা দুপাশে ঝুলিয়ে দেয়।প্রজনন
মৌসুমে পুরুষ দোয়েলের নাচানাচি অনেক বেড়ে যায় এবং নাচের সময়ও বেড়ে যায়।মাটির
ঢিবিতে গাছের ডালে ডাণা ঝাপটিয়ে লেজ উপরে ণিচে করে দু-পাশে ডাণা ঝুলিয়ে,বুকের পশম
ফুলিয়ে,লম্বা শিস দিয়ে ডাকা ডাকি করে এরা তার পছন্দের ইস্ত্রি পাখিটিকে আকর্ষণ
করার চেষ্টা করে।
দোয়েল পাখির খাদ্য তালিকাতে
থাকে প্রধানত কীটপতঙ্গ,টিকটিকি,ফুলের মধু,খেজুর গাছের পাঁকা ফল ও রস,নরম জাতীয়ফল
এবং বসত বাড়ীর উচ্ছিষ্ট।
দোয়েল সাধারণত প্রাকৃতিক
ভাবে সৃষ্ট গাছের কোটর,দালানের কার্নিশ,দালানের নিরাপদ পাইপের ফোকর অথবা বৃষ্টির
পাণি থেকে নিরাপদ যায়গাতে খড়কুটো,শুকনা ঘাস,গাছের শিকড়,পাতা,রশি,আঁশ জাতীয় বস্তু
ইত্যাদি দিয়ে ণীড় তৈরি করে।
বর্তমান শহরে পরিবেশের সাথে
দোয়েলের মানিয়ে নেয়া দুষ্কর এই কারণে শহুরে পরিবেশের দোয়েলকে এখন অনেকটাই কম দেখা
যায়।গ্রামে ফসলের খেতে অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক প্রয়োগের কারণে প্রয়োজনীয় খাদ্যর অভাবে
দিনে দিনে কমে যাচ্ছে দোয়েলের সংখ্যা।
বাংলাদেশে পাখি প্রেমীদের
সংখ্যা অনেক থাকলেও পাখি গবেষণা ও পাখি রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় সংস্থা ও উদ্যোগ
অপ্রতুল।স্বাধীনতার পরবর্তী বছর গুলতে আমাদের এই দেশে বিচরণ করা অনেক পাখি এখন আর
দেখা যায়ণা।তাই এখনি উদ্যোগ গ্রহণ না করা গেলে আমাদের সবার পরিচিত এবং জাতীয়পাখি
দোয়েলেও নীরবে আমাদের চোখের আড়াল হয়ে যাবে।তাই আসুন দোয়েল সহ আমাদের দেশের সকল
পাখি সংরক্ষণে সকলেই এগিয়ে আসি।